মাহবুবর রহমান | রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট
মুক্তির নেশায়, জাতিকে মুক্ত করতে রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিরস্ত্র আবু সাঈদ বুক পেতে দিয়েছিল, ঘাতকের নির্মম বুলেটে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবু সাঈদ। শহিদ হয় আবু সাঈদ। জুলাই- আগষ্টের গণআন্দোলনে আবু সাঈদের মতো শত শত ছাত্র জনতার বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে, ১৫ বছরের শাষিত স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে মুক্তি মিলে,গঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের কাছে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক।
মুক্তির উদ্দেশ্য তখনই সাধিত হবে যখন দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ বিরাজমান বৈষম্য থেকে মুক্তি পাবে !
আমি প্রান্তিক পর্যায়ে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার সঙ্গে জড়িত। এ পেশাতে প্রায় ১৯ বছর ধরে কাজ করছি। প্রাথমিক শিক্ষাতেও বৈষম্য বিরাজমান। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার সূতিকাগারের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত মজবুত হয়ে উঠেনি, মরিচাপরা ব্লেড দিয়ে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর নাড়ি কাঁটার মতো হলো প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা। ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতির অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম আজও শুরু হয়নি অথচ সময় পেরিয়ে গেছে ১৪ বছর।
চেয়ারের মানুষগুলো পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধ্যান ধারনার পরিবর্তন হয়, স্থির থাকে না নিয়ম নীতি।আজও প্রাথমিক শিক্ষাকে আকর্ষণীয় ও যুগপযোগী করে গড়ে তুলতে পারিনি তেমনি পারিনি শিক্ষকতা পেশাকেও! দায় কার ???
প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকতা পেশায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা চাকরিতে যোগদান করে, কিছুদিন পর অন্য পেশাতে চলে যায় কিন্তু কেন ?
কেন মেধাবীরা প্রাথমিকের শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ?
অধিদপ্তরের প্রাথমিক শিক্ষায় যারা গবেষণার করেন তারা কি উত্তর খোঁজার চেষ্টার করেছেন ?
বিংশ শতাব্দিতে কবি শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর লেখনির মাধ্যমে তখনকার শিক্ষাগুরুর জীবনচিত্র তুলে ধরেছিলেন, লাট সাহেবের ৩ ঠাং ওয়ালা কুকুরের ১ ঠাং – এর খরচের সমান পন্ডিত মশায়ের বেতন, এ বেতন দিয়ে জীর্ণশীর্ণভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। বর্তমান সময়ে অষ্টম শ্রেণি পাশ সরকারি অফিসের গাড়িচালকদের বেতন ১২তম গ্রেডে আর স্নাতক পাশ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন একধাপ নিচে ১৩তম গ্রেডে মাত্র ১১,০০০ টাকা !!
সচিবদের পাচক ভাতার চেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ৫,০০০ টাকা কম। একবিংশ শতাব্দিতেও পাচক ভাতা ও অষ্টম শ্রেণি পাশ গাড়িচালকের বেতন প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনের চেয়ে বেশি। অধিকাংশ শিক্ষক ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে হতাশা ও মনঃকষ্টে পাঠদানের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দৈনিক টিফিন ভাতা কত জানেন, মাত্র ৬:৬৬ টাকা।
দুঃখের বিষয় প্রাথমিক শিক্ষকরা বেতন বৃদ্ধির দাবি তুললে “খাজাঞ্চিতে টান পড়ে” অথচ রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে ভিনদেশী প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে।
লেখক: মু. মাহবুবর রহমান
সহকারি শিক্ষক
হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট
ই-মেইল: mrchonchal61@gmail.com
………………………………………………………………
[বি.দ্র: মতামতটি একান্তই লেখকের, যা হুবুহু প্রকাশিত হলো। এই লেখার সাথে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পর্ক নেই]
লেখা পাঠান আমাদের নিকট : shiksharalo.news@gmail.com
লিখুন শিক্ষা বিষয়ক সংবাদ, ফিচার, কলাম, মতামত। পাঠিয়ে দিন উপরোক্ত পত্রিকার মেইলে। লেখার শেষে মোবাইল নম্বর ও ছবি পাঠাতে ভুলবেন না , ধন্যবাদ…………………………….
ফলো করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ : শিক্ষার আলো ডট কম
ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল : Shikshar Alo
Posted ২:৪৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো